আপনার ছোট ব্যবসার প্যাকেজিং ডিজাইন এখন নিজেই করুন ক্যানভা (Canva) দিয়ে
বাংলাদেশে এখন এফ-কমার্স (F-commerce) বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জয়জয়কার। কেউ ঘরে বসে আচার বানাচ্ছেন, কেউ বা হ্যান্ডপেইন্ট করা শাড়ি বিক্রি করছেন, আবার কেউ অর্গানিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে অনেকেই আটকে যান, আর সেটা হলো—প্যাকেজিং (Packaging)।
১. প্যাকেজিং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? (The Unboxing Experience)
২. কাজ শুরুর আগে যা যা লাগবে (Preparation)
বক্স বা প্যাকেটের সঠিক মাপ: আপনি কি রেডিমেড বক্সে স্টিকার লাগাবেন? নাকি বক্সটাই প্রিন্ট করাবেন? স্টিকারের জন্য: স্কেল দিয়ে মেপে দেখুন কত বাই কত ইঞ্চি লাগবে। (যেমন: ২x২ ইঞ্চি গোল স্টিকার, বা ৩x৫ ইঞ্চি চারকোনা লেবেল)। বক্সের জন্য: বক্সের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা মাপুন। তবে যারা নতুন, তাদের আমি পরামর্শ দেব শুরুতে রেডিমেড বক্সে কাস্টম স্টিকার বা "বেলি ব্যান্ড" (Belly Band) ব্যবহার করতে। এটা সাশ্রয়ী।
আপনার ব্র্যান্ড কিট: লোগো (PNG ফরম্যাটে হলে ভালো), ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট কালার কোড (Hex Code), এবং ফন্ট ঠিক করে নিন। প্রিন্টিং বাজেট: আপনি কি ঢাকার ফকিরাপুল বা নীলক্ষেত থেকে প্রিন্ট করাবেন, নাকি সাধারণ কালার প্রিন্টার দিয়ে করবেন? সেটার ওপর ডিজাইনের কালার নির্ভর করবে।
৩. ক্যানভাতে ডিজাইন শুরু করার ধাপসমূহ (Step-by-Step)
বাংলাদেশের কালচার অনুযায়ী টেমপ্লেট বাছুন। যেমন, আচারের জন্য একটু দেশি মোটিভ বা ফোক আর্ট প্যাটার্ন ভালো লাগবে। কসমেটিকস বা জুয়েলারি হলে মিনিমালিস্ট বা ছিমছাম ডিজাইন বেছে নিন।
টিপস: ফন্ট নির্বাচনের সময় সতর্ক হোন। ইংরেজির জন্য 'Montserrat', 'League Spartan' বা 'Playfair Display' খুব জনপ্রিয়। বাংলায় ক্যানভার ফ্রি ভার্সনে ফন্ট কম, তাই আপনি চাইলে 'Lipighor' বা অন্য সাইট থেকে লেখা পিএনজি (PNG) করে এনে বসাতে পারেন। অথবা ক্যানভা প্রো থাকলে ফন্ট আপলোড করতে পারবেন।
অর্গানিক প্রোডাক্ট হলে: leaves, green watercolor, nature. খাবার হলে: spices pattern, chili illustration, yummy icons. বাঙালি ভাইব আনতে: Search করুন "Mandala," "Paisley," বা "Ornamental Border." এগুলো জামদানি বা আলপনার লুক দেবে।
লাল/কমলা: ক্ষুধা বাড়ায় (খাবারের জন্য বেস্ট)। সবুজ/বাদামী: প্রাকৃতিক বা ভেষজ পণ্যের জন্য। কালো/সোনালি: প্রিমিয়াম বা লাক্সারি পণ্যের জন্য (যেমন: পারফিউম, ঘড়ি)। প্যাস্টেল কালার: স্কিনকেয়ার বা বেবি প্রোডাক্টের জন্য। ভুল কালার দিলে কাস্টমার বিভ্রান্ত হতে পারে। যেমন, আচারের প্যাকেটে নীল রঙ সাধারণত মানায় না।
৪. প্যাকেজিংয়ের জরুরি তথ্য (Information Hierarchy)
প্রোডাক্টের নাম। নেট ওজন (Net Weight)। উপাদান তালিকা (Ingredients)। ব্যবহার বিধি (How to use)। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ (Expiry Date/Best Before)। উৎপাদনকারীর ঠিকানা ও কন্টাক্ট নম্বর। সোশ্যাল মিডিয়া: আপনার ফেসবুক/ইন্সটাগ্রাম পেজের নাম বা কিউআর কোড (QR Code)। ক্যানভাতে বাম পাশের মেনুতেই QR Code জেনারেটর আছে। সেখানে আপনার পেজের লিংক দিলেই কোড তৈরি হয়ে যাবে। এটা প্যাকেটে বসিয়ে দিন, যাতে স্ক্যান করলেই পেজে চলে যায়।
৫. প্রিন্ট রেডি করা (Exporting for Print)
Share বাটনে ক্লিক করে Download-এ যান। File Type হিসেবে PDF Print সিলেক্ট করুন (PNG বা JPG নয়)। কারণ PDF Print হাই রেজুলেশন দেয়। কালার প্রোফাইল (Color Profile): যদি ক্যানভা প্রো থাকে, তবে CMYK সিলেক্ট করুন। আর ফ্রি ভার্সন হলে RGB-তেই সেভ করুন, তবে প্রিন্টিং প্রেসে বলে দেবেন কনভার্ট করে নিতে। Bleed and Crop Marks: কাটিং-এর সময় যাতে সাদা অংশ বের হয়ে না যায়, তাই ডাউনলোডের সময় 'Crop marks and bleed' অপশনে টিক দিয়ে দিন।
৬. কম খরচে প্রিমিয়াম প্যাকেজিং আইডিয়া (Cost-Saving Hacks)
স্টিকার ম্যাজিক: ভালো মানের জিপলক ব্যাগ (Kraft paper pouch) বা পলি প্যাকেট কিনুন (চকবাজারে পাওয়া যায়)। তার ওপর ক্যানভায় ডিজাইন করা সুন্দর একটা ভিনাইল স্টিকার (Vinyl Sticker) লাগিয়ে দিন। দেখতে একদম প্রফেশনাল লাগবে। থ্যাঙ্ক ইউ কার্ড: প্যাকেটের ভেতর একটা ছোট "Thank You" কার্ড দিন। ক্যানভায় "Thank You Card" লিখে সার্চ দিলে অনেক টেমপ্লেট পাবেন। সেখানে হাতে লিখে কাস্টমারের নাম দিন। এই পার্সোনাল টাচ কাস্টমারকে স্পেশাল ফিল করায়। হ্যান্ড ট্যাগ (Hang Tags): কাপড়ের বিজনেসের জন্য বক্সে প্রিন্ট না করে সুন্দর হ্যাং ট্যাগ ডিজাইন করুন। পাটের দড়ি (Jute twine) দিয়ে কাপড়ে ঝুলিয়ে দিন। ইকো-ফ্রেন্ডলি লুক আসবে। র্যাপিং পেপার: টিস্যু পেপার বা বাটার পেপারে মুড়িয়ে একটা কাস্টম স্টিকার দিয়ে সিল করে দিন।
৭. বাংলাদেশি প্রিন্টিং গাইডলাইন
অল্প কোয়ান্টিটি (১০-৫০ পিস): আপনার এলাকার ভালো কোনো কম্পিউটার কম্পোজ বা ডিজিটাল স্টুডিওতে যান। বলুন "Photo Sticker Paper"-এ হাই কোয়ালিটি প্রিন্ট দিতে। তারপর কাঁচি দিয়ে কেটে নিন। মাঝারি কোয়ান্টিটি (১০০-৫০০ পিস): ঢাকার নীলক্ষেত বা কাঁটাবন প্রেস মার্কেটে ডিজিটাল স্টিকার প্রিন্ট করা যায়। দাম কিছুটা কম পড়বে। বাল্ক কোয়ান্টিটি (১০০০+ পিস): ফকিরাপুল বা আরামবাগের প্রেসগুলোতে যান। সেখানে ক্যানভার ডিজাইন দেখালে ওরা সাইজ ঠিক করে অফসেট প্রিন্ট করে দেবে। অফসেট প্রিন্টে খরচ অনেক কমে যায়।
৮. সচরাচর করা ভুলসমূহ (Common Mistakes)
অতিরিক্ত লেখা: প্যাকেটের গায়ে রচনা লিখবেন না। কাস্টমারের পড়ার সময় নেই। কি-পয়েন্টগুলো হাইলাইট করুন। Low Resolution ছবি: ক্যানভাতে গুগলের ঝাপসা ছবি এনে বসাবেন না। ক্যানভার নিজস্ব লাইব্রেরি বা Unsplash থেকে হাই-কোয়ালিটি ছবি নিন। মার্জিন না রাখা: বর্ডারের একদম ধার ঘেঁষে লিখবেন না। কাটিং-এর সময় কাটা পড়তে পারে। অন্তত ০.২৫ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখুন।
উপসংহার
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *




.webp)
 (1080 x 1080 px).webp)
.webp)
.webp)
.webp)